একই পরিবেশে বহু ধরনের উদ্ভিদ ও প্রাণীর স্বাভাবিক অবস্থানকে জীববৈচিত্র্য বলে। পরিবেশ ভারসাম্য পূর্ণ হয় এই ধরনের জীবের একত্রে অবস্থানের কারণে।
জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ (Conservation of Biodiversity)
জীববৈচিত্র্য পরিবেশ ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার মূল উপাদান। মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী ও সেবার উৎস হচ্ছে প্রাকৃতিক সম্পদ। খাদ্য, পরিধেয়, বাসস্থান, ঔষধ, বিনোদন ইত্যাদির জন্য মানুষ প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল। এ সকল সম্পদ বনাঞ্চল, নদী-নালা, অন্যান্য জলাশয় ও সমুদ্র থেকে আহরণ করা হয় । মানুষের অপরিণামদর্শী কর্মকাণ্ডের ফলে পৃথিবীর জীববৈচিত্র্য ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে। এ ধরনের কর্মকাণ্ড অবাধে চলতে থাকলে ২০২৫ সালের মধ্যে ২০-২৫ শতাংশ প্রাণী ও উদ্ভিদ পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে।
বাংলাদেশে জীববৈচিত্র্য প্রচুর এবং তার সম্ভাবনাও অনেক। তবে তা আজ হুমকির সম্মুখীন। জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে সংকুচিত হচ্ছে অন্যান্য প্রাণীর আবাসস্থল। তারা হারিয়েছে তাদের শিকারের ক্ষেত্র। এককালে বাংলাদেশের অনেক এলাকা জুড়ে রয়েল বেঙ্গল টাইগার বা ডোরাকাটা বাঘ দেখা যেত। এখন তাদের কেবল সুন্দরবনেই খুঁজে পাওয়া যায়। উনিশ শতকের শুরুতে ভাওয়াল ও মধুপুরের গড় অঞ্চলে হাতির দেখা মিলেছে। এখন কেবল পার্বত্য চট্টগ্রাম, সিলেট এবং ময়মনসিংহের পাহাড়েই হাতি দেখা যায় ।
বাংলাদেশে ১১৯ জাতের স্তন্যপায়ী, ৫৭৮ জাতের পাখি, ১২৪ জাতের সরীসৃপ ও ১৯ জাতের উভচরকে শনাক্ত করা হয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার কর্তৃক প্রকাশিত রেড ডাটা বুক-এ বাংলাদেশের ২৩টি প্রজাতির বন্যপ্রাণীর অস্তিত্ব হুমকির সম্মুখীন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এই তালিকায় রয়েছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিতাবাঘ, হাতি, অজগর, কুমির ও ঘড়িয়াল ইত্যাদি। কারো মতে বাংলাদেশে ২৭টি বন্যপ্রাণীর অস্তিত্ব বিপন্ন । আরও ৩৯টি প্রজাতি হুমকির সম্মুখীন। উনিশ শতকেই ১৯টি প্রজাতি বাংলাদেশ থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। এর মধ্যে আছে তিন ধরনের গরু, বুনো মহিষ, এক ধরনের কালো হাঁস, নীল গাই, কয়েক ধরনের হরিণ, রাজশকুন ও মিঠা পানির কুমির ইত্যাদি।
জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজন জরুরিভিত্তিতে দৃঢ় ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সংস্থা, এনজিও, বেসরকারি খাত ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে সহযোগিতা জোরদার এবং নিম্নোক্ত কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে।
আরও দেখুন...